চলতি মাসের ১১ তারিখ করোনাভাইরাস নিয়ে বাংলাদেশের জন্য সুখবর আসছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল।



তিনি লিখেছেন- গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে ফোন করেছিলাম একটা কাজে। তিনি দিলেন বিরাট এক সুসংবাদ। জাতিকে তিনি করোনা শনাক্তকরণ কিট উপহার দিতে যাচ্ছেন ১১ এপ্রিল। এ জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সামান্য সহযোগিতা লাগবে। তা পেলে তিনি আশাবাদী, ১১ এপ্রিল থেকে দেশে উৎপাদিত কিটে স্বল্পমূল্যে শনাক্ত করা যাবে করোনাভাইরাস।



বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন গাইডলাইনে করোনা প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হিসেবে করোনাবাহী মানুষকে চিহ্নিত করে আলাদা রাখার কথা বলা হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া আর তাইওয়ানের মতো দেশ এটি করেই করোনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পেরেছে।



করোনাবাহী মানুষকে আলাদা রাখতে হলে প্রথমে তার দেহে করোনাভাইরাস আছে কি না শনাক্ত করতে হয়। এর কোনো বিকল্প নেই। অথচ বাংলাদেশে শুরু থেকে রয়েছে শনাক্তকরণ কিটের মারাত্মক স্বল্পতা। পৃথিবীর উন্নত অনেক দেশেও কম মাত্রায় হলেও এ সংকট রয়েছে।



ফলে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পক্ষ থেকে করোনা শনাক্তকরণ কিট বের করার ফমুর্লার সংবাদটি মাসখানেক আগে প্রকাশ করা মাত্র তা দেশে বিদেশে আলোড়ন তোলে। ডা. জাফরুল্লাহ ও কিটের ফমুর্লা আবিষ্কারকারী দলের প্রধান ডা. বিজন কুমার শীলকে নিয়ে সংবাদ ছাপা হতে থাকে প্রায় প্রতিদিন।



ডা. জাফরুল্লাহ আমার সাথে আলাপে ফর্মুলাটি বাস্তবায়ন করে কিট উৎপাদনের কাজে সরকারের বিভিন্ন অকুণ্ঠ সহযোগিতার কথা বললেন। তিনি বিশেষভাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, এনবিআর-এর চেয়ারম্যান এবং চীনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সহযোগিতার কথা জানালেন।



তিনি মনে করেন, এখন শুধু সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটু সহযোগিতা দরকার। সহযোগিতা দরকার বাংলাদেশি মানুষের রক্তে এই কিট দিয়ে করোনা শনাক্তকরনের কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য অনুমতির। সেটি দ্রুততার সাথে পেলে ১১ এপ্রিলে তিনি দিবেন সুসংবাদটি।



আমরা এ সুসংবাদের অপেক্ষায় থাকলাম।



আরো পড়ুন
‘ইথানলে সারতে পারে করোনা সংক্রমণ, সরকার চাইলে গবেষণা শুরু করব’



সারা বিশ্বে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে বিজ্ঞানীরা নানা পর্যায়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আতঙ্কে দিন কাটছে কোটি কোটি মানুষের। এমন একটা সময়ে আশার কথা বললেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের করোনাভাইরাস গবেষক অধ্যাপক ড. মো. আলিমুল ইসলাম। ইথানলের মাধ্যমে কোভিড-১৯ ভাইরাসকে দমন করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।



তবে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি আশাবাদী হলেও এখনো ল্যাবরেটরিতে গবেষণা করেননি। তবে সরকার চাইলে তিনি এ বিষয়ে গবেষণা করতে প্রস্তুত আছেন। শ্বাসতন্ত্রের সংক্রামক রোগে ইথানল বেশ কার্যকরী। তিনি নিজেই নিজের দেহে তা প্রয়োগ করে সুফল পেয়েছেন।



অধ্যাপক আলিমুল ইসলাম তাঁর এমন মতামতটি নিজের ফেসবুকে পেইজেও শেয়ার করেছেন। সেখানে তাঁরই এক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন যে, জাপানেরও একজন গবেষক একইভাবে গবেষণা চালিয়ে সফল হয়েছেন।



ড. আলিমুল ইসলাম একজন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বনামধন্য গবেষক। তিনি এর আগে ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া, সার্স করোনা-১-সহ বিভিন্ন ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করেছেন। ২০০৩ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অধীনেও কাজ করেছেন।



ড. আলিমুল বলেন, যেকোনো ভাইরাসের দুটি আবরণ থাকে। ইথানল কিংবা সাবান প্রয়োগে ওই দুটি স্তর গলে যায়। এমতাবস্থায় ধ্বংস হতে অনেকটাই বাধ্য ভাইরাসটি। বাংলদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিজ্ঞানী জানান, আরএনএ গোত্রের করোনা ভাইরাসের বেশ কয়েকটি জাত রয়েছে। কোভিড-১৯ তার একটি।



করোনার কোনো কোনো গোত্রকে ইথানল প্রয়োগে ধ্বংস করা যায়। আরএনএ গোত্রের প্রতিটি ভাইরাসের চরিত্র প্রায় কাছাকাছি বলে ইথানলে কোভিড-১৯ সারবে বলে মনে করছেন তিনি। এক্ষেত্রে করোনা আক্রান্ত রোগী কী মাত্রায় এই ইথানল ব্যবহার করবেন সেটিও তিনি জানান। তিনি বলেন, ইথানল-মিশ্রিত কুসুম গরম পানির কুলকুচি করে বা বাষ্প টেনে এর সুফল পাওয়া যেতে পারে। ড. আলিমুল বলেন এটি কোনো চিকিৎসা নয়। চিকিৎসা সহায়ক পদ্ধতি।



তিনি বলেন, সাধারণ সর্দি জ্বর কাশি ও গলা ব্যাথাসহ শ্বাসকষ্টের রোগীরাও এটি করে ফল পেতে পারেন। করোনায় আক্রান্ত রোগীরাও এটি করে কার্যকর ফল পেতে পারেন। তবে ইথানল ব্যবহারে সরকারের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অনুমতি নিতে হবে। কারণ ক্লিনিক ও ল্যাবরেটরিতে গবেষণার কাজ ছাড়া এর ব্যবহারে অনুমতি নেই। সরকার চাইলেই এটি সম্ভব।



ড. আলিমুল বলেন, তিনি নিজে ও তাঁর আটজন ছাত্র ইথানল ব্যবহার করে এরই মধ্যে জ্বর ও সর্দি কাশিসহ শ্বাসকষ্টের সমস্যা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তবে ইথানল ব্যবহারে অ্যালার্জি রয়েছে এমন হৃদরোগী, অ্যাজমা ও ডায়াবেটিস রোগীদের এটি ব্যবহার বারণ বলে জানান তিনি। সরকার চাইলে এ বিষয়ে তার শিক্ষার্থীদের নিয়ে গবেষণা শুরু করব।