বাংলাদেশে করো’না চোখ রাঙাচ্ছে। একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক করো’না রোগী শনাক্ত হয়েছে। চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটাই সর্বোচ্চ নয়, সর্বোচ্চ দেখার এখনো অনেক বাকি আছে।



প্রতিদিন ১০ হাজার করে পরীক্ষা হলে আরো অনেক বেশি শনাক্ত হবে এবং এই পুরো মাস জুড়ে করো’নার সংক্রমণ বাড়তেই থাকবে। এই বাস্তবতায় আমাদের বাঁ’চার পথ কী’? আমাদের কী’ করতে হবে?



বিশেষজ্ঞ এবং চিকিতৎসকরা মনে করছেন, বাংলাদেশের সামনে এখনো সুযোগ আছে এবং এটাই আমাদের সম্ভবত শেষ সুযোগ। এই সুযোগ যদি আম’রা কাজে লাগাতে না পারি তাহলে করো’না সংঙ্কট থেকে আম’রা বাঁচতে পারবো না।



তাহলে বাঁচতে হলে কী’ করতে হবে? একাধিক চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞদের সাথে আম’রা আলাপ করেছি। তাদের পরাম’র্শের ভিত্তিতে এই সুপারিশমালা উপস্থাপন করা হলো-



১. অনতিবিলম্বে কঠোর লকডাউন এবং প্রয়োজনে কারফিউ জারি করতে হবে
ডা. এবিএম আবদুল্লাহ মনে করেন যে, বাংলাদেশে যখন করো’না পরিস্থিতি ভ’য়াবহভাবে বাড়ছে, তাই আমাদের সামনে আবার কঠোর লক ডাউনের কোনো বিকল্প নেই। আমাদের সামনে সুযোগও রয়েছে।



সামনে ঈদের ছুটি এবং এই ছুটিটা মানুষ সব সময় দীর্ঘ চায়। আর এবারের ঈদ একটা ম্লান এবং উৎসবহীন ঈদ হবে। কাজেই এই ঈদের সময় থেকে ধরে যদি আম’রা দুই সপ্তাহের কঠোর লকডাউন জারি করি- যেখানে কেউ ঘর থেকে বের হতে পারবে না, এরকম একটি পরিস্থিতি যদি আম’রা তৈরি করতে পারি, তাহলে আম’রা হয়তো করো’না পরিস্থিতির লাগাম টেনে ধরতে পারবো।



২. চিকিৎসার দিকে মনোযোগ দিতে হবে
আমাদের এখন চিকিৎসার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। কারণ আমাদের চিকিৎসা কাঠামো শুধু হচ্ছে, হবে এবং পরিকল্পনা উদ্যোগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।



কিন্তু বাস্তবতা হলো যে, ১০ হাজার করো’না রোগীর চিকিৎসা করার মতো সক্ষমতা আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার নেই। আর এ কারণে আমাদের বাঁচতে হলে এখনই সরকারি-বেসরকারি সকল হাসপাতালকে করো’না চিকিৎসার আওতায় আনতা হবে।



প্রত্যেকটি হাসপাতালকে তিনটি জোনে ভাগ করতে হবে। একটি প্রাই’মা’রি জোন, একটি কোভিড-১৯ জোন এবং একটি নন কোভিড-১৯ জোন। যেটা অন্যান্য দেশগুলো করেছে এবং প্রত্যেকটি হাসপাতা’লে যদি করো’না রোগীর চিকিৎসার উপযু’ক্ত ব্যবস্থা না থাকে তাহলে এই রোগ আরো ছড়িয়ে পড়বে।



৩. বেশি সংক্রমিত এলাকাগুলোকে চিহ্নিতকরণ ও বিচ্ছিন্নকরণ
করো’না বেশি সংক্রমিত এলাকাগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে এবং বিচ্ছিন্ন করতে হবে। আমাদের সামাজিক সংক্রমণ শুরু হয়েছে বহু আগেই।



এখন আমাদের যেই জায়গাগুলোতে সবচেয়ে বেশি করো’না সংক্রমণ অর্থাৎ হটস্পটগুলো চিহ্নিত করে বিচ্ছিন্ন করতে হবে। যাতে মানুষজন এখান থেকে বেরুতে না পারে, অন্য এলাকার মানুষের সাথে মেলামেশা না করতে পারে।



৪. ব্যাপক পরীক্ষার ব্যবস্থা
আমাদের ব্যাপক পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষ করে ঢাকার বাইরে যেন পরীক্ষার হার বাড়ে। যে সমস্ত জায়গাগুলোতে সংক্রমণ হতে পারে ঐ রকম জায়গাগুলোতে আমাদের পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।



ব্যাপকহারে সমাবেশ বা জনসমাগম হচ্ছে সেই সমস্ত জায়গা বিশেষ করে গার্মেন্টস, কলকারখানা, অন্যান্য শিল্প কারখানা এগুলোতে ব্যাপকভাবে নিয়মিত পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। পরীক্ষার মাধ্যমে যারা শনাক্ত হবে তাদেরকে দ্রুত পৃথক করতে হবে। সেইসাথে যারা তাদের সংস্প’র্শে এসেছে এমন ব্যক্তিদের আলাদা করতে হবে।



৫. স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে ঢেলে সাজাতে হবে
সর্বশেষ কাজ হলো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে ঢেলে সাজাতে হবে। কারণ করো’না সংকটের দুই’মাসের বেশি সময়ে আম’রা দেখেছি যে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আসলে করো’না মোকাবেলার জন্য যা কিছু করা দরকার ছিল তার কিছুই তারা করেনি। সবকিছু করতেই ব্যর্থ হয়েছে তারা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এখনো করো’না মোকাবেলার ক্ষেত্রে নেতৃত্বদানকারী মন্ত্রণালয় হিসেবে দাঁড়াতে পারেনি।



এ কারণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটি ভাল টিম দিতে হবে, যাদেরকে চিকিৎসকরা মানেন, যাদের দ্বারা চিকিৎসকরা উদ্দীপ্ত হবেন এবং যারা চিকিৎসকদের পাশে থেকে এই যু’দ্ধে বাংলাদেশকে জয়ী করতে কাজ করতে পারবেন। আমাদের বাঁ’চার সুযোগ ক্রমশ কমে আসছে। তাই বাঁচতে হলে আমাদের এই কাজগুলো এখনই করতে হবে।