Breaking News

ফেরেশতারা কোন ভাষায় আমলনামা লেখেন

অসংখ্য-অগণিত মাখলুক সৃষ্টি করেছেন মহান আল্লাহপাক। ফেরেশতা তাঁর তেমনি এক বিশেষ সৃষ্টি। ‘ফেরেশতা’ ফারসি শব্দ। আরবিতে বলা হয় ‘মালাকুন’ বা ‘মালাইকা’। এর অর্থ বার্তাবাহক। ইস’লামী পরিভাষা মতে, এমন এক নূরানী সৃষ্টিকে ফেরেশতা বলা হয়, যারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন আকৃতি ধারণ করতে সক্ষম। সর্বদা তারা আল্লাহর নির্দেশ পালনে রত থাকেন, কখনো বিরুদ্ধাচরণ করেন না (কাওয়াইদুল ফিকহ)। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে কিছু দায়িত্ব দিয়ে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন। দুনিয়ার জীবনে আমাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করার জন্য প্রত্যেকের সঙ্গে দুজন ফেরেশতা নিয়োজিত করেছেন। তাঁরা আমাদের নেক আমল, বদ আমল সবই লিখে রাখেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘স্ম’রণ রেখো! দুই গ্রহণকারী ফেরেশতা তার ডানে ও বামে বসে তার কর্ম লিপিবদ্ধ করে।’ (সুরা : কাফ, আয়াত : ১৭)

তাফসিরবিদদের মতে, মানুষের দুই দিকে দুজন ফেরেশতা নিয়োজিত থাকেন, ডান দিকের ফেরেশতা তার ভালো কাজগুলো লিখে রাখেন আর বাম দিকের ফেরেশতা তার মন্দ কাজগুলো লিখে রাখেন। (কুরতুবি)

অনেকের প্রশ্ন জাগতে পারে, এই ফেরেশতারা আমাদের আমলনামা কোন ভাষায় লেখেন? এর সহ’জ উত্তর হলো মহান আল্লাহ যে ফেরেশতাকে যে কাজে নিয়োজিত করেছেন, তাঁকে সে কাজের আনুষঙ্গিক সব যোগ্যতা দিয়ে বানিয়েছেন। অ’তএব ফেরেশতারা হয়তো সব ভাষাই জানেন, আমাদের সব গতিবিধি হুবহু আমাদের ভাষা লিখে রাখেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে তার জন্য তৎপর প্রহরী তার কাছেই আছে।’ (সুরা : কাফ, আয়াত : ১৮)

অর্থাৎ আম’রা যা বলি বা করি সবই সংরক্ষিত থাকে। ছোট-বড় কোনো কাজই এর বাইরে থাকবে না। অনেকের ধারণা ফেরেশতাদের ভাষা আরবি। যেহেতু রাসুল (সা.) বলেন, ‘তিন কারণে আমি আরবি পছন্দ করি। ১. আমি একজন আরবিভাষী। ২. কোরআন আরবি ভাষায়। ৩. জান্নাতবাসীদের ভাষা হবে আরবি। (শুআবুল ঈ’মান : ২/৬৯৯, তাবরানি, হাদিস : ১১৪৪১)

এই হাদিস থেকে অনেকে ধারণা করেন, জান্নাতের ভাষা যেহেতু আরবি হবে, সেহেতু পরকালীন ভাষা হয়তো আরবি। সে হিসেবে আসমানের অধিবাসী ফেরেশতাদের ভাষাও আরবি হতে পারে। ফলে তাঁরা হয়তো আমাদের আমলনামা আরবিতেই লেখেন। যদিও এ ব্যাপারে কোনো স্পষ্ট প্রমাণ কোরআন-হাদিসে পাওয়া যায় না যে ফেরেশতাদের ভাষা আরবিই হবে।

যদি সত্যিই তাঁরা আমাদের আমলনামা আরবিতে লেখেন, তবে কেউ এই দাবি করতে পারবে না যে তাঁরা বাংলা বোঝেন না। ফলে তাঁরা আমাদের আমলনামা লিখতে পারবেন না। বরং তাঁদের আল্লাহ যার কাছে পাঠান তার ভাষা শিখিয়েই তার কাছে পাঠান। যেমন—জিবরাঈল (আ.)-কে মহান আল্লাহ সব নবীর কাছে প্রেরণ করেছেন, একেকজন নবীর ভাষা একেক ছিল। তিনি সবার ভাষাই বুঝতেন।

আমাদের মোবাইল অ্যাপ, সফটওয়্যারগুলো যেমন বাংলায় কোডিং করা নয়, কিন্তু দিব্বি আমাদের সব গতিবিধি এগুলোর মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। আমাদের কথাবার্তা আড়ি পেতে শোনা, দূর থেকে রেকর্ড করা, আমাদের লোকেশন ট্রেস করা, ফোনের ক্যামেরা হ্যাক করে আশপাশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। এর জন্য মোবাইলের অ’পারেটিং সিস্টেম, কোডিং কিছুই বাংলা হওয়া শর্ত নয়। তেমনি ফেরেশতাদের ভাষা আরবি হলেও আমাদের আমলনামা লেখা ও তাঁদের মতো করে সংরক্ষণ করা কোনো অসম্ভব বিষয় নয়।

এখনকার দুনিয়ায় তো ভিন্ন দেশের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য সে দেশের ভাষা জানাও জরুরি নয়। এমন অনেক ভ’য়েস ট্রান্সলেটর অ্যাপ আছে যেগুলো আমাদের বাংলা কথা চায়নিজ কিংবা জা’পানি ভাষায় ট্রান্সলেট করে তাকে শোনাবে। স্যাটেলাইটের এই যুগে প্রযু’ক্তির উৎকর্ষ আমাদের বুঝিয়ে দেয়, মহান আল্লাহ কত শক্তিশালী, কত মহান। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে কত নিদর্শন রয়েছে, যা তারা প্রত্যক্ষ করে কিন্তু তারা সেগুলো থেকে উদাসীন।’ (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ১০৫) মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর নির্দেশিত পথে জীবন পরিচালিত করার তাওফিক দান করুন।

Check Also

ম’ন্ত্রণা’লয় থেকে ব’রাদ্দ পাওয়া গাড়ি কেনার টাকা দিয়ে মসজিদ বানালেন মেয়র!

নিজের ব্যবহারের জন্য গাড়ি কিনতে ম’ন্ত্রণা’লয় থেকে ব’রাদ্দ পাওয়া সমস্ত অর্থ দিয়ে মসজিদ বানালেন বরগুনার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *