ময়মনসিংহে এক ব্যতিক্রম ঘটনার জন্ম দিয়েছেন রীতা আক্তার ও আমিনুল ইসলাম দম্পতি। সাড়ে তিন বছরের দাম্পত্য জীবনে নিঃসন্তান ছিলেন তারা। স্বপ্ন ছিল কবে তাদের ঘরে আসবে একটি সন্তান। অবশেষে এ দম্পতির ঘরে একটির পরিবর্তে এলো দুটি ফুটফুটে সন্তান। তাও আবার মাত্র ৩৯ দিনের ব্যবধানে।চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এটি বিরল ঘটনা।



এ দম্পতি একটি সন্তান লাভের আশায় ময়মনসিংহে ডা. শিলা সেনের চিকিৎসা গ্রহণ করেন। চিকিৎসা আর পরামর্শ গ্রহণের পর রীতা গর্ভবতী হন। আলট্রাসনোগ্রাম করার পর রীতার গর্ভে দুটি সন্তানের অস্তিত্ব ধরা পড়ে। গর্ভধারণের পরও তিনি নিয়মিত ডা. শিলা সেনের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা গ্রহণ করতে থাকেন।



গত (১৩ মে) হঠাৎ করে রীতার পেট ব্যথা শুরু হলে তাৎক্ষণিকভাবে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করলে তাকে চেম্বারে আসতে বলেন ডাক্তার শিলা সেন। রীতা আসার পর তাকে ময়মনসিংহের শিলাঙ্গন হাসপাতালে ভর্তি করে লেবার ওটি’তে পাঠানো হয়। ওইদিনই (১৩ মে) রীতা একটি কন্যা সন্তান প্রসব করেন।সন্তানটি ৩১ সপ্তাহে জন্ম নিয়েছিল। ওজনও ছিল মাত্র ১১০০ কি.গ্রাম।



অন্যদিকে, দ্বিতীয় সন্তানটি রীতার গর্ভেই থেকে যায়। প্রথম সন্তান জন্মের পর রীতা শারীরিকভাবে সুস্থতাবোধ করতে থাকলে ৭২ ঘণ্টা পর পরবর্তী চিকিৎসার জন্য তাকে ময়মনসিংহের চূরখাইয়ে অবস্থিত কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর গত ২৩ জুন রীতা গর্ভের দ্বিতীয় পুত্র সন্তান প্রসব করেন। রীতা আক্তার ও আমিনুল ইসলাম দম্পতির বাড়ি গাজীপুরের কাপাশিয়া উপজেলার বর্মী এলাকার নয়ানগর গ্রামে।



রীতা আক্তার জানান, দীর্ঘদিন পেটে সন্তান না আসায় ডা. শিলা সেনের চিকিৎসা গ্রহণ করি। চিকিৎসা আর পরামর্শ গ্রহণের পর আল্লাহর রহমতে গর্ভবতী হই।এক কন্যা সন্তান জন্মের ৩৯ দিন পর ছেলে সন্তানের জন্ম দিয়েছি। আমি একজন গর্বিত মা।



ডা. শিলা সেন জানান, সাধারণত জমজ বাচ্চার প্রসব কয়েক মিনিট বা এক-দুই ঘণ্টার ব্যবধানে হয়ে থাকে। এটি একটি বিরল ঘটনা। এ দম্পতির জন্য আশীর্বাদ রইলো। রীতা ও তার সন্তানরা এখন সুস্থ আছে।



যে কারণে মানুষের রিজিক কমে যায়



রিজিক মহান আল্লাহর অন্যতম নেয়ামত। ইবাদত কবুলের অন্যতম শর্তও হালাল রিজিক। হালাল রিজিকের জন্যই মানুষ ক’ষ্ট পরিশ্রম করে। মানুষ এক সময় ভালো ও পর্যাপ্ত রিজিকি ও নেয়ামত ভোগ করলেও হঠাৎ কোনো এক অদৃশ্য কারণে রিজিক কমে যেতে শুরু করে। কিন্তু কেন মানুষের রিজিক কমে যায়?



মানুষ রিজিক কমে যাওয়ার কারণে হতাশ হয়, আর কারণ খুঁজে বেড়ায়। কোনো কারণ খুঁজে পায় না কিন্তু গোনাহের কাজ ছাড়ে না। অন্যায় পথে চলা বন্ধ করে না। অন্যায়-অ’প’রাধের কথা চিন্তাও করে না। এ অ’প’রাধ বা অন্যায়ের কারণেই মানুষের রিজিকের বরকত কমে যেতে থাকে। আর হাদিসে পাকে রিজিক কমে যাওয়ার প্রকৃত কারণ উঠে এসেছে। আর তাহলো- হ’জরত সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘দোয়া ব্যতিত আর কোনো কিছুই ভাগ্য পরিবর্তন করে না, নেক কাজ ব্যতিত আর কিছু মানুষের আয়ু (হায়াত) বাড়ায় না এবং কৃত গোনাহের কারণেই বান্দা জীবিকা (রিজিক) থেকে বঞ্চিত হয়।’ (ইবনে মাজাহ, মু’সনাদে আহমাদ, মিশকাত)



এ হাদিস থেকে বুঝা যায়, মানুষ যখন গোনাহ করতে থাকে তখনই রিজিক তথা জীবিকা থেকে বঞ্চিত হয়। মানুষের রিজিক কমে যায়। যা মানুষ অনুমান করতে পারে না।



গোনাহমুক্ত জীবনের জন্য প্রয়োজন আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। তবেই আল্লাহ বান্দার গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন। রিজিকের বরকত দান করবেন। যেভাবে আল্লাহ তাআলা কুরআনে পাকে ক্ষমা প্রার্থনার ফজিলত ঘোষণা করেছেন-
‘অ’তঃপর বলেছিঃ তোম’রা তোমাদের পালনক’র্তার ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অ’ত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দিবেন, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ত তি বাড়িয়ে দিবেন, তোমাদের জন্যে উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্যে নদীনালা প্রবাহিত করবেন। [ সুরা নুহ : আয়াত ১০-১২)



ক্ষমা প্রার্থনার দ্বারা আল্লাহ উল্লেখিত ছয়টি নেয়ামত- গোনাহ মাফ, উত্তম রিজিকের জন্য বরকতের বৃষ্টি, অসহায়কে ধন-সম্পদ, নিঃসন্তান ব্যক্তিকে সন্তান-সন্তুতি, সবুজ উদ্যান এবং উপকারি নদী-নালা দান করবেন।



সুতরাং মুমিন মু’সলমানের উচিত গোনাহের কাজ ছেড়ে দেয়া। তবেই রিজিকে বরকত লাভ হবে। আর এ জন্য সব সময় আল্লাহর কাছে তাওবাহ-ইসতেগফার করা জরুরি। ছোট থেকে সাইয়েদুল ইসতেগফার পর্যন্ত সবগুলো ইসতেগফার বেশি বেশি পড়া। আর তাহলো-
– أَستَغْفِرُ اللهَ
উচ্চারণ : ‘আস্তাগফিরুল্লাহ।’
অর্থ : আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি।



নিয়ম : প্রতি ওয়াক্ত ফরজ নামাজের সালাম ফেরানোর পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ইসতেগফারটি ৩ বার পড়তেন।’ (মিশকাত)



– أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ
উচ্চারণ : ‘আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি।‘
অর্থ : আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর দিকেই ফিরে আসছি।



নিয়ম : এ ইসতেগফারটি প্রতিদিন ৭০/১০০ বার পড়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিদিন ৭০ বারের অধিক তাওবাহ ও ইসতেগফার করতেন।’ (বুখারি)



– رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ إِنَّكَ (أنْتَ) التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ
উচ্চারণ : ‘রাব্বিগ্ ফিরলি ওয়া তুব আলাইয়্যা ইন্নাকা (আংতাত) তাওয়্যাবুর রাহিম।’
অর্থ : ‘হে আমা’র প্রভু! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমা’র তাওবাহ কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি মহান তাওবা কবুলকারী করুণাময়।’



নিয়ম : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ম’সজিদে বসে এক বৈঠকেই এই দোয়া ১০০ বার পড়েছেন।’ (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)



– أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ
উচ্চারণ : ‘আস্তাগফিরুল্লা হাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলায়হি।’
অর্থ : ‘আমি ওই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোনো মাবুদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তাঁর কাছেই (তাওবাহ করে) ফিরে আসি।’



নিয়ম : দিনের যে কোনো ইবাদত-বন্দেগি তথা ক্ষমা প্রার্থনার সময় এভাবে তাওবাহ-ইসতেগফার করা। হাদিসে এসেছে- এভাবে তাওবাহ-ইসতেগফার করলে আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দেবেন, যদিও সে যু’দ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়নকারী হয়।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি, মিশকাত)



– সাইয়েদুল ইসতেগফার পড়া
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ
উচ্চারণ : আল্লাহু’ম্মা আংতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আংতা খালাক্কতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহ্দিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাতু আউজুবিকা মিন শাররি মা সানাতু আবুউলাকা বিনিমাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবুউলাকা বিজাম্বি ফাগ্ফিরলি ফা-ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আংতা।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমিই আমা’র প্রতিপালক। তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমা’রই বান্দা আমি যথাসাধ্য তোমা’র সঙ্গে প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমা’র সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমা’র কাছে আশ্রয় চাই। তুমি আমা’র প্রতি তোমা’র যে নেয়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমা’র কৃত গোনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। কারন তুমি ছাড়া কেউ গোনাহ ক্ষমা করতে পারবে না।’



নিয়ম : সকালে ও সন্ধ্যায় এ ইসতেগফার করা। ফজর ও মাগরিবের নামাজের পর এ ইসতেগফার পড়তে ভুল না করা। কেননা হাদিসে এসেছে- যে ব্যক্তি এ ইসতেগফার সকালে পড়ে আর সন্ধ্যার আগে মা’রা যায় কিংবা সন্ধ্যায় পড়ে সকাল হওয়ার আগে মা’রা যায়, তবে সে জান্নাতে যাবে।’ (বুখারি)



আল্লাহ তাআলা মু’সলিম উম্মাহকে গোনাহের কাজ থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। কৃত গোনাহের জন্য বেশি বেশি তাওবাহ-ইসতেগফার করার তাওফিক দান করুন। তাওবাহ-ইসতেগফারের মাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থনা করে রিজিকের বরকতসহ কুরআন-সুন্নায় ঘোষিত যাবতীয় নেয়ামত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।