এই সময়ে সর্দি-কাশি দেখা দেওয়া ভয়ের ব্যাপার। কিন্তু এই করোনা আবহে এটাই ত্রাসের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে সর্দি-কাশি হলেই যে আপনি করোনা আক্রান্ত সেটা নয়। আমাদের শরীরের অতি পরিচিত উপসর্গ হলো কাশি। এটি মূলত শ্বাসতন্ত্রীয় রোগের উপসর্গ। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু সহজ পদক্ষেপ মেনে চললে কাশির প্রকোপ কমে যায়।



তারা কুসুম গরম পানি পান করতে, তরল জাতীয় খাবার খেতে, প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন করতে এবং বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দেন। সহজ পরামর্শ সবসময় সহজে মেনে চলা যায় না। অনেক সময় কাশির তীব্রতায় বিশ্রাম নেওয়াটাই মুশকিল হয়ে পড়ে, বিশেষ করে রাতে। কিন্তু রাতে কাশি বেড়ে যায় কেন?



শরীরকে সংক্রমণের বিরুদ্ধে ভালোভাবে লড়াই করার সুযোগ দিতে বিশ্রাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঘুমের চেয়ে ভালো বিশ্রাম আর কিই-বা হতে পারে? কিন্তু সমস্যা হলো, বিশ্রামের জন্য বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই কাশি শুরু হয়। কাশি অনেক সময় এতোটাই বেড়ে যায় যে, ঘুম আসে না।



রাতে কাশির মাত্রা বৃদ্ধির এক নাম্বার কারণ হলো মাধ্যাকর্ষণ (গ্রাভিটি)। জর্জিয়া ইনফেকশাস ডিজিজের ফিজিশিয়ান মিশেল ব্লাস বলেন, ‘যখন আমরা শুয়ে থাকি, তখন গলায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে শ্লেষ্মা জমতে থাকে। এই সমস্যা এড়ানোর উপায় হচ্ছে, শরীরের উপরের অংশ একটু উঁচুতে তুলে ঘুমানো। ফলে গলায় শ্লেষ্মা জমতে পারবে না।’ এ কাজে ওয়েজ পিলো ব্যবহার করতে পারেন।



শুষ্ক বাতাস নাক ও গলায় প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। ফলে রাতে কাশির প্রকোপ বেড়ে যায়। এ সময় কাশির তীব্রতা রোধে ঘরে হিউমিডিফাইয়ার ব্যবহার করতে পারেন। এটি ঘরের বাতাস আর্দ্র করবে এবং আপনার শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া সহজ হবে।



অবশ্য হিউমিডিফাইয়ার ব্যবহারের সময় সচেতন হতে হবে। কেননা এতে যে পানি ব্যবহার করবেন তা জীবাণুমুক্ত না হলে বাতাসে জীবাণু ভেসে বেড়াবে এবং অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হবে।



কাশির প্রকোপে রাতে ভালোমতো ঘুম না হলে বা কাশি কমাতে একটি কফ ড্রপ (থ্রোট লজেন্স) চুষতে থাকুন। শ্লেষ্মা উৎপাদন করে না এমন হার্ড ক্যান্ডিও চুষতে পারেন। এতে গলা প্রশান্তি পাবে এবং কাশির মাত্রা কমবে।



প্রচুর পানি পান করুন। বিশেষ করে সন্ধ্যা থেকে বিছানায় শোয়ার আগ পর্যন্ত। তরল জাতীয় খাবার খান। পানি বা তরল গলার শ্লেষ্মা পাতলা করে। ফলে আপনি আরাম পাবেন।



অল্প মধু খান। বার্মিংহাম ডিপার্টমেন্ট অব মেডিসিনের অন্তর্গত ইউনিভার্সিটি অব আলাবামার ফিজিশিয়ান স্টিফেন রাসেল বলেন, ‘কাশি কমাতে উষ্ণ পানি বা চায়ের সঙ্গে মধু খেলে উপকার পাওয়া যায়। শুধু মধুও খেতে পারেন।’ মধু খেলে ২ থেকে ১৮ বছর বয়সি ছেলেমেয়েদের রাতের কাশি কমে যায়। তবে এক বছরের কম বয়সি শিশুকে মধু খাওয়ানো যাবে না।



কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন: বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঠান্ডা অথবা ফ্লু জনিত কাশি বেশিদিন থাকে না, চিকিৎসা ছাড়াই নিজে নিজে চলে যায়। কিন্তু এক সপ্তাহের বেশি কাশি থাকলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। অ্যালার্জি, গ্যাস্ট্রোইসোফ্যাজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (জিইআরডি), অ্যাজমা, ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি) অথবা ক্রনিক সাইনুসাইটিস থেকে কাশি হতে পারে। ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস থেকেও কাশি হতে পারে। তাই দীর্ঘসময় ধরে কাশিতে ভুগলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতেই হবে।