কোলে নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে থাকা এক বছরের সন্তানটি নিয়ে হাসপাতাল চত্বরে শুয়ে হাউমাউ করে কাঁদছিলেন প্রেমচাঁদ । পাশে বসে তাঁর স্ত্রী আশা দেবীও সমানে কেঁদে যাচ্ছিলেন। রোববার( ২৯ জুন) বিকেলে এমনই এক দৃশ্য দেখা গেল ভারতের উত্তরপ্রদেশের কনৌজে।



কয়েক দিন ধরে শিশুটির জ্বর। গলাও ফুলে উঠেছিল। ছেলেকে নিয়ে প্রেমচাঁদ ও তাঁর স্ত্রী সোজা ছুটে গিয়েছিলেন কনৌজের সরকারি হাসপাতালে। অভিযোগ, চিকিৎসকরা শিশুটিকে ছুঁয়ে পর্যন্ত দেখেননি, উল্টে প্রেমচাঁদকে বলেছেন, এখানে কিছু করা সম্ভব নয়। কানপুরের হাসপাতালে তাঁরা যেন শিশুটিকে নিয়ে যান।



যদিও চিকিৎসকরা এবং হাসাপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রেমচাঁদের এই অভিযোগকে সরাসরি নস্যাৎ করেছেন। উল্টে হাসপাতালের তরফ থেকে দাবি করা হয়, ওই দিন বিকেল ৪টা ১৫ মিনিট নাগাদ শিশুটিকে নিয়ে আসেন ওই দম্পতি। তার অবস্থা খুবই সঙ্কটজনক ছিল। সঙ্গে সঙ্গেই শিশুটিকে জরুরি বিভাগে ভর্তি করানো হয়। প্রাথমিক চিকিৎসর পর খবর দেওয়া হয় শিশুরোগ বিশেষজ্ঞকে। কিন্তু তত ক্ষণে আধঘণ্টা কেটে গিয়েছিল। এই সময়ের মধ্যেই মৃত্যু হয় শিশুটির।



হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আরও দাবি করেন, শিশুটিকে বাঁচানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করা হয়েছিল। এখানে গাফিলতির কোনও প্রশ্নই ওঠে না।



কিন্তু প্রেমচাঁদের অভিযোগ, “প্রথমে চিকিৎসকরা ছেলেকে ছুঁয়ে দেখতেই চাননি। হাসপাতালেই বেশ কিছু লোক ঘটনাটির ভিডিও করতে থাকায় চিকিৎসকরা ছেলেকে পরীক্ষা করা শুরু করেন। আমাদের আধঘণ্টা অপেক্ষা করানো হয়েছিল। তারপর ছেলেকে কানপুরে নিয়ে যেতে বলেন চিকিৎস



করা।” এর পরই প্রেমচাঁদ বলেন, “আমি গরিব মানুষ। টাকা নেই। কীই বা করতে পারতাম!” সারাবিশ্বে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে ভাইরাসটিতে মৃত্যুবরণ করেছেন ৫ লাখেরও বেশি মানুষ। বিবিসি জানায়, এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-ডব্লিউএইচও বলছে, এবারে নতুন ভয়াবহ একটা পর্যায়ে ঢুকছে বিশ্ব। ইউরোপ ও এশিয়ার কিছু দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণ এসেছে বটে কিন্তু বিশ্বের অনেক দেশে কভিড-১৯ আক্রান্ত বাড়ছে উচ্চগতিতে।



সংস্থাটি জানায়, ১ মিলিয়ন বা দশ লাখ রোগী শনাক্ত হতে সময় লেগেছে তিন মাস কিন্তু শেষ ১০ লাখ রোগী মাত্র আট দিনে পাওয়া গেছে। লাতিন আমেরিকা কর্তৃপক্ষের একজন বলছেন, যে সংখ্যা আপনারা দেখতে পাচ্ছেন সেটা হলো শনাক্ত হওয়ার পরিমাণ কিন্তু এটা একটা পানির ওপর ভেসে থাকা বরফের টুকরোর মতো আমরা কেউ জানি না আসল সংখ্যা কত বেশি হতে পারে।



দক্ষিণ এশিয়া, লাতিন আমেরিকা ও মধ্য আমেরিকা এবং আফ্রিকার কিছু দেশে সংক্রমণের গ্রাফ উর্ধ্বমুখী। যুক্তরাষ্ট্র শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যার দিক থেকে সবার থেকে এগিয়ে থেকেও এখনো নতুন রোগী শনাক্ত করছে বেশি। কিছু রাজ্যে লকডাউন শিথিল করার পর রোগী শনাক্তের হার বেড়েছে।



ব্রাজিলে ১০ লাখ রোগী ছাড়িয়ে গেছে, সেখানেও হু হু করে বাড়ছে কভিড রোগী। জুন মাসের এই সময়টায় এসে ব্রাজিল, মেক্সিকো, ভারত ও লাতিন আমেরিকায় রোগী শনাক্ত বেড়েছে।