জানেন কম ঘুমের ফলে কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আপনার যৌ’ন জীবন। বি: দ্র : ই্উটিউব থেকে প্রকাশিত সকল ভিডিওর দায় সম্পুর্ন ই্উটিউব চ্যানেল এর।



এর সাথে আমরা কোন ভাবে সংশ্লিষ্ট নয় এবং আমাদের পেইজ কোন প্রকার দায় নিবেনা।ভিডিওটির উপর কারও আপত্তি থাকলে তা অপসারন করা হবে।প্রতিদিন ঘটে যাওয়া নানা রকম ঘটনা আপনাদের মাঝে তুলে ধরা এবং সামাজিক সচেতনতা আমাদের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য।



আরো পড়ুনঃ ১২টি স্বাস্থ্য সমস্যা যা ভিন্ন কোনো রোগের মতো আচরণ করে



বিশেষজ্ঞরা বলেন, ৪০% এরও বেশি ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা সঠিক রোগ নির্ণয়ে বিভ্রান্ত হন। এর মূল কারণ হলো এক রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ অন্য রোগের মতো আচরণ করা, এবং প্রায় সময়ই সঠিক রোগ নির্ণয় করা কঠিন হয়ে পড়ে।



এই লেখায় আমরা এমন ১২টি স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি যা অন্য কোনো রোগের মতো আচরণ করে। আসুন দেখি কি কি সমস্যা আমাদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে।



১. লাইম ডিজিজ বনাম ফ্লু
এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া (বোরেলিয়া বাগডোরফেরি) দ্বারা সংক্রমিত আঁটুলি পোকার কামড়ে সৃষ্ট এই রোগটিতে আক্রান্ত ব্যক্তির ত্বকে ষাঁড়ের চোখের মতো গোলাকার র্যাশ দেখা দেয়। যদিও ক্ষেত্র বিশেষে কোনো রকম র্যাশ ছাড়াই রোগটি দেখা দিতে পারে। এর পরিবর্তে, শরীর ব্যথা, জ্বর এবং ক্লান্তি ভর করে রোগীর শরীরে, যা মূলত ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জার লক্ষণ।



রক্ত পরীক্ষা করে এই সমস্যার চিহ্নিত করা সম্ভব হয়ে ওঠে না, কারণ ২ সপ্তাহের আগে শরীরে এর কোনো অ্যান্টিবডি তৈরি হয় না এবং এটি আসলে লাইম ডিজিজ নাকি ফ্লু তা বুঝতে চিকিৎসককে বেগ পেতে হয়। অবশ্য অতি অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা এটি সহজেই ধরে ফেলেন এবং অ্যান্টিবায়োটিকের মাধ্যমে রোগীকে সুস্থ করার চেষ্টা চালান।



২. কিডনি পাথর বনাম অ্যাবডোমিনাল অ্যাওরটিক অ্যানিউরিজম
কিডনি পাথরের লক্ষণের সাথে অন্যান্য অনেক রোগের লক্ষণ ও উপসর্গের মিল পাওয়া যায়, যার মধ্যে অ্যাবডোমিনাল অ্যাওরটিক অ্যানিউরিজম অন্যতম ভয়ঙ্কর রোগ। দুটো সমস্যার শুরুতেই পেটের তীক্ষ্ণ ব্যথা, বমি বমি ভাব বা বমি হয়ে থাকে। অ্যাওরটা দেহের প্রধানতম ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি রক্তনালী যা বুকের মাঝ বরাবর দিয়ে তলপেটের দিকে গমন করে। এই রক্তনালীটি কোনো কারণে স্ফীত হলে অ্যাওরটিক অ্যানিউরিজমের উপরোক্ত লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। যদি কোনো কারণে অ্যাওরটা ছিঁড়ে যায় বা তাহলে তা মৃত্যুর কারণও হতে পারে।



বিশেষজ্ঞরা বলেন, রোগীর বয়স যদি ৬০ বা তার বেশি হয় এবং পূর্বে কখনো কিডনি পাথর না হয়ে থাকে তাহলে প্রথমে একে অ্যাবডোমিনাল অ্যাওরটিক অ্যানিউরিজম হিসাবে ধরে নিয়ে চিকিৎসা শুরু করতে হবে।



৩. হেপাটাইটিস বনাম অ্যালার্জি
দীর্ঘদিন ধরে হেপাটাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে এর কোনো রকম উপসর্গ প্রকাশ নাও পেতে পারে, যদিও, এই সময়টাতেই যকৃত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যকৃতের যেকোনো সমস্যার অন্যতম লক্ষণীয় উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে পেট ব্যথা, চুলকানি, এবং ক্লান্তি যা অন্য অনেক সমস্যার উপসর্গের সাথেও মিলে যায়, যেমন অ্যালার্জি।



তাই ঠিক কোন সমস্যার কারণে এসব উপসর্গ দেখা দিয়েছে তা নির্ণয় করতে চোখ এবং জিহ্বার রংয়ের দিকে নজর দেওয়া জরুরি। যদি মনে হয় জিহ্বা ও চোখ কিছুটা হলুদ হয়েছে, তাহলে তাৎক্ষণিক ভাবে ডাক্তার দেখাতে হবে।



৪. থাইরয়েডের সমস্যা বনাম উচ্চ রক্তচাপ
থাইরয়েড গ্রন্থি দেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ, যা অনেক হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে। যখন থাইরয়েড গ্রন্থি নিষ্ক্রিয় (হাইপোথাইরয়েডিজম) ভূমিকা পালন করে তখন ওজন বেড়ে যাওয়া, তাপমাত্রায় সংবেদনশীলতা, এবং ক্লান্তি বোধ হতে পারে, যা বিষণ্ণতার সাথে গুলিয়ে ফেলা অস্বাভাবিক নয়।



আবার যদি থাইরয়েড গ্রন্থি অতিরিক্ত সক্রিয় (হাইপার থাইরয়েডিজম) হয়ে পড়ে, তাহলে ওজন কমে যাওয়া, মেজাজ খিটখিটে, এবং হার্ট বিট দ্রুত হতে দেখা যায়। এই উপসর্গগুলোও অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রে দেখা যায়, যেমন উচ্চ রক্তচাপ। এক্ষেত্রে থাইরয়েড হরমোন পরীক্ষা করা জরুরি।



৫. পালমোনারি এমবোলিজম বনাম প্যানিক অ্যাটাক
এই মারাত্মক ভয়ঙ্কর অবস্থার সূত্রপাত ঘটে ফুসফুসের পালমোনারি আর্টারিতে রক্ত জমাট বাঁধার ফলে। এর কারণে বুকে তীক্ষ্ণ ব্যথা, শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা, উদ্বেগ এবং মুর্চ্ছা যাওয়ার মতো সমস্যা তৈরি হয়। এই উপসর্গগুলো প্যানিক অ্যাটাক, নিউমোনিয়া, অথবা হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গের সাথেও মিলে যায়। গবেষণা বলছে, ৩৩.৫% ক্ষেত্রে এই উপসর্গগুলো রোগ নির্ণয়ে বিভ্রান্ত করে।



৬. সিলিয়াক ডিজিজ বনাম গ্যাস্ট্রো ইনটেসটিনাল ট্র্যাক্ট (GIT) ইনফেকশন
গম, বার্লি, রাই ও জবের মতো বিভিন্ন শস্যের আটা বা ময়দায় গ্লুটেন নামক এক ধরণের উপাদানের উপস্থিতি পাওয়া যায়, যা দিয়ে তৈরি রুটি বা অন্যান্য খাদ্য বস্তু হজম করতে না পারার অক্ষমতা সিলিয়াক ডিজিজ নামে পরিচিত। চিকিৎসকরা বলেন, এই রোগে আক্রান্ত প্রায় ৮৩% রোগীর এই রোগ ধরাই পড়ে না বা রোগ নির্ণয়ে ভুল হয়। এর কারণ হলো ব্যক্তি ভেদে এই রোগের উপসর্গগুলো একেক রকম হয় এবং গ্যাস্ট্রো ইনটেসটিনাল ট্র্যাক্ট (GIT) ইনফেকশনের উপসর্গ যেমন পেট ব্যথা, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, মাথা ব্যথা সহ আরো অনেক উপসর্গের সাথে মিলে যায়।



৭. লুপাস বনাম কিডনি এবং ফুসফুসের সমস্যা
লুপাস নামক এই জটিল প্রদাহজনিত রোগটির অনেকগুলো পর্যায় এবং অনির্দিষ্ট ও একদম ভিন্ন রকমের উপসর্গ রয়েছে। মুখমণ্ডল জুড়ে প্রজাপতি গড়নের মতো র্যাশ দেখে সহজেই এই রোগ বোঝা গেলেও কিছু রোগীর এ রকম র্যাশ দেখা যায় না। এর অন্যান্য উপসর্গ হলো ক্লান্তি, অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, এবং কিডনি ও ফুসফুসে সমস্যা।



তাই প্রথমেই এই রোগ সঠিক ভাবে নির্ণয় করা চিকিৎসকদের জন্য একটু কষ্টসাধ্য হয়ে যায়, শুধু তখনই এই রোগটি একবারে বোঝা যায় যখন রোগী অন্যান্য কিডনি ও ফুসফুস জনিত কোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে না থাকেন।



৮. স্ট্রোক বনাম অ্যালকোহল বিষক্রিয়া
গবেষণা বলছে, দুর্ভাগ্যজনক ভাবে, প্রায় সময়ই স্ট্রোকের প্রাথমিক লক্ষণগুলো চিকিৎসকদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে থাকেন রোগীরা। এই বাধাগ্রস্ত রক্ত প্রবাহের অবস্থাটি মাথা ঝিমঝিমানি, মাইগ্রেন, অথবা অ্যালকোহল বিষক্রিয়ার সাথে গুলিয়ে ফেলা হয়। কারণ স্ট্রোকের উপসর্গ যেমন দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া, কথা বলতে সমস্যা, বিভ্রান্তি এবং মানসিক অস্থিরতা ইত্যাদি উল্লেখিত অসুস্থতার সাথেও মিলে যায়।



৯. ক্যান্সার বনাম অন্য অনেক অসুস্থতা
কেউই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার দুঃসংবাদ শুনতে চান না, যদিও, যত দ্রুত এই রোগ শনাক্ত করা যাবে তা নিরাময়ের সম্ভাবনা তত বেশি। কিন্তু জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল অনকোলজির মতে, প্রায় ৪৪% এরও বেশি ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা কিছু ক্যান্সার শনাক্ত করতে বিভ্রান্ত হন। এর কারণ হলো রোগ নির্ণয়ের যন্ত্রাংশ পুরোপুরি সঠিক মান নির্ণয় করতে পারে না এবং উপসর্গগুলো প্রায়ই অস্পষ্ট। ফুসফুসের ক্যান্সার নির্ণীত না হয়ে নির্ণয় হতে পারে ফুসফুসের ইনফেকশন, আর স্তন ক্যান্সারে বদলে স্তনের প্রদাহ, ইত্যাদি। তাই এসব ক্ষেত্রে অন্য চিকিৎসকের মতামতও নেওয়া উচিৎ।



১০. অ্যাপেনডিসাইটিস বনাম ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম
পেটের ডান পাশে নিচের দিকে তীব্র ব্যথার উপসর্গের কারণেই অ্যাপেনডিসাইটিস বহুল পরিচিত। যদিও, কিছু কিছু সময় এই ব্যথা অন্য কোথাও হতে পারে, তাই সঠিক রোগ নির্ণয়ের আগে চট করে কিছু বলে দেওয়া যায় না। কারণ ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোমেও একই রকম ব্যথা, বমি ভাব বা বমির ঘটনা ঘটতে পারে, ফলে অ্যাপেনডিসাইটিস নাকি ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম তা আলাদা করা কঠিন হয়। যেহেতু অ্যাপেন্ডিক্স ফেটে গেলে তা প্রাণসংহারী হতে পারে সেহেতু ব্যথা কোথায় হচ্ছে তা বিবেচনা না করে পেট ব্যথা দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তার দেখানো জরুরি।



১১. রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বনাম অন্যান্য অস্থিসন্ধির ব্যথা
অস্থিসন্ধির এমন অনেক ব্যথা রয়েছে যা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের উপসর্গের মতোই মনে হতে পারে, যা সঠিক ভাবে নির্ণয় করা বেশ কঠিন। যেমন পায়ের ছোট একটি হাড়ের কুঁজ অস্থিসন্ধির অন্য কোনো অসুস্থতার ক্ষতিকর নয় এমন অসুস্থতার উপসর্গ হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, যদি দীর্ঘদিন ধরে অস্থিসন্ধিতে সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে তা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের সাথে চিকিৎসকরা গুলিয়ে ফেলতে পারেন।



১২. অপ্রতুল রক্ত সঞ্চালন বনাম হৃদরোগ
যদি পায়ের পাতা এবং গোড়ালি ফুলে যায়, এটি পায়ে অপ্রতুল রক্ত সঞ্চালনের লক্ষণ, ডাক্তারি ভাষায় যাকে ভেনাস ইনসাফিসিয়েন্সি বলা হয়। পায়ের রক্ত নালীতে রক্ত যথাযথ ভাবে সঞ্চালিত হয়ে হৃৎপিণ্ডে পৌঁছাতে না পারার কারণে এই সমস্যা তৈরি হয়। এই সমস্যা যদি বেশ জটিল হয়ে পড়ে, তাহলে অন্য অনেক সমস্যা সূত্রপাত ঘটতে পারে।



যদিও অন্য অনেক অসুস্থতা, যেমন হৃদরোগেও পা ফুলে যাওয়ার উপসর্গ দেখা দিয়ে থাকে। তাই venous insufficiency আলাদা ভাবে নির্ণয় করার বিষয়টি উপেক্ষিত রয়ে যেতে পারে।



আপনার কি কখনো ভুল রোগ শনাক্ত হয়ে ছিলো? আপনার অভিজ্ঞতার কথা জানান আমাদের কমেন্ট বক্সে।
নিউজটি শেয়ার করার অনুরোধ রইলো