মাতবরদের ঘু’ষ না দেয়াই কাল হল বাসাইলের সেই কাপড় ব্যবসায়ী রতনের। এ কারণেই তাকে গুনতে হচ্ছে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা। রোববার রাতে থ্রি-পিস বিক্রির পাওনা টাকা প্রবাসীর স্ত্রীর কাছে চাইতে গিয়ে প্রথমে শা’রীরিক নি’র্যাতনের শি’কার হন ওই কাপড় ব্যবসায়ী।



পরে গ্রাম্য সালিশের নামে তার কাছ থেকে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা আদায়ের জন্য সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়া হয়। এর আগে ঘ’টনার রাতে ৮টার পরপরই ওই ব্যবসায়ীকে আ’টকে রেখে বিভিন্নভাবে ৫০ হাজার টাকা ঘু’ষ দেয়ার জন্য প্রস্তাব দেন স্থানীয় ইউপি সদস্য ইসমাইল হোসেন (সারোয়ার)।



টাকা না পেয়ে সকালে গ্রাম্য সালিশের আয়োজন করেন তিনি। এ ব্যাপারে রতনের বাবা মোশারফ হোসেন বলেন, ঘু’ষের টাকা না দেয়ায় আমার ছেলেকে তারা ফাঁ’সিয়েছে। আমি এর বি’চার দা’বি করছি।



সরেজমিন জানা যায়, কাউলজানী ইউপি সদস্য ইসমাইল হোসেন (সারোয়ার) ও মনিরুজ্জামান মনির বিভিন্ন সময়ে গ্রাম্য সালিশের নামে অনেক মানুষকেই হয়রানি করছেন। তাদের দা’পটে স্থানীয়রা মুখ খুলতেও ভ’য় পান।



এ ব্যাপারে কাউলজানী ইউপির সদস্য ইসমাইল হোসেন (সারোয়ার) টাকা চাওয়ার কথা অ’স্বীকার করেন। তিনি বলেন, অ’ভিযুক্ত রতন আমার দূরসম্পর্কের মামাতো ভাই। এ সময় তিনি পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছেন বলেও দা’বি করেন।



এ ব্যাপারে কাউলজানী ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হবি চৌধুরী বলেন, সা’লিশের নামে অর্থ আদায়ের কোনো বিধান নেই। এছাড়া তড়িঘড়ি করে ওই গৃহবধূকে তালাক দেয়ার জন্য বা’ধ্য করা আ’ইনসম্মত হয়নি।



জানাগেছে, মো. রতন মিয়া (৩৫) দীর্ঘদিন ধরে অনলাইনে থ্রি-পিসের (মেয়েদের জামা) ব্যবসা করে আসছেন। তার বাড়ি টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজে’লার ফুলকি ইউনিয়নের বালিয়া গ্রামে। তার শ্বশুরবাড়ি একই উপজে’লার কাউলজানি ইউনিয়নের বাদিয়াজান গ্রামে।



পরিচয়ের সূত্র ধরে সম্প্রতি বৃষ্টি নামের এক গৃহব’ধূর কাছে এক হাজার টাকা বাকিতে থ্রি-পিস বিক্রি করেন রতন। আর এতেই ঘ’টে বি’পদ। সেই পাওনা এক হাজার টাকা চাইতে গিয়ে দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা জ’রিমানা দিতে হচ্ছে রতনকে।



সোমবার বিকালে স্থানীয় মাতবরদের আয়োজনে উপজে’লার বাদিয়াজান গ্রামের খালেক পী’রের বাড়িতে সা’লিশি বৈ’ঠকে এ জ’রিমানা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া ওই গৃহব’ধূর সঙ্গে রতনের অ’বৈধ সম্পর্ক রয়েছে- এমন অ’ভিযোগ এনে স্থানীয় মাতবররা ওই গৃহব’ধূর স্বামীকে তালাক দিতে বা’ধ্য করেন।



তবে গৃহব’ধূ বৃষ্টি জানিয়েছেন, তার সঙ্গে রতনের কোনো সম্পর্ক নেই। স্থানীয় মাতবর ও তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের যোগসাজশে স্বামীকে দিয়ে সা’লিশি বৈঠকে তাকে তা’লাক দিতে বা’ধ্য করেছে।



এদিকে রতনের বাবা মোশারফ জ’রিমানার টাকা জোগাড়ের জন্য মাতবরদের কাছে এক মাস সময় চান; কিন্তু মাতবররা তার কাছ থেকে নগদ ১০ হাজার টাকা রেখে বাকি টাকা দিতে ১৫ দিনের সময় বেঁ’ধে দেন।



একই সঙ্গে ওই গৃহব’ধূ সা’লিশ বৈ’ঠকে স্থানীয় কাজীর উপস্থিতিতে বিয়ের কাবিনের তিন লাখ টাকা স্বামীর কাছে দা’বি করবে না মর্মে তালাকনামায় স্বাক্ষর করেন। সা’লিশি বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ফুলকি ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য জামাল।



এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইউপি সদস্য ই’সমাইল হোসেন (সারোয়ার) ও মনিরুজ্জামান মনিরসহ স্থানীয় মাতবররা। রতন মিয়া জানান, তিনি অনলাইনে থ্রি-পিসের ব্যবসা করেন। এ কারণে বৃষ্টি নামের ওই গৃহব’ধূ তার কাছ থেকে সম্প্রতি একটি এক হাজার টাকা মূল্যের (বাকিতে) থ্রি-পিস ক্রয় করেন।’ধূর কাছে তিনি পাওনা এক হাজার টাকা চান। এ সময় তার কাছে টাকা না থাকায় সন্ধ্যায় বাসায় যেতে বলেন টাকার জন্য। তিনি জানান, তিনি রাত ৮টার দিকে ওই গৃহব’ধূর বাসায় যান টাকার জন্য।



টাকা নেয়ার পরপরই গৃহব’ধূর শ্বশুরবাড়ির লোকজন অ’নৈতিক সম্পর্কের অ’ভিযোগ এনে তাকে মা’রপি’ট করে। পরদিন সা’লিশি বৈ’ঠকের মাধ্যমে তাকে দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা জ’রিমানা করা হয়।



এ বিষয়ে ভু’ক্তভো’গী না’রী বলেন, অনলাইনে কাপড় নিছিলাম। কাপড়ের টাকার জন্যই আসছিলো রতন। ঘরের ভেতরেও আসে নাই, দরজার কাছে ছিল। আমার দেবর তাকে ধা’ক্কা দিয়ে বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে দেয়। এরপর অনেকবার ডাকলেও সে দরজা খোলে নাই।



সারারাত আমাকে ও রতনকে এক ঘরে আ’টকে রেখেছে। সারারাত সে নিচে ছিলো, আমি খাটের উপরে ছিলাম। সকালে বাড়ির সবাইকে ডেকে এনে একটা মি’থ্যা না’টক সাজিয়ে আমার সংসার ভে’ঙেছে।



তিনি বলেন, আমার ভু’ল ছিল- আমি বাড়ির কাউকে না জানিয়ে রতনকে রাতে টাকা দেয়ার জন্য আসতে বলেছি। এ ঘ’টনা না ঘ’টলে তো আমার সংসার ভা’ঙতো না। আমার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা চা’প দিয়ে আমাকে তালাক দিতে বা’ধ্য করেছে।



আমার বি’রুদ্ধে স্বামীর পাঠানো ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার মি’থ্যা অ’ভিযোগ তুলেছে। তিনি জানান, স্থানীয় মাতবররা এসে পরদিন সকালে সা’লিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে সিদ্ধান্ত দিয়ে যান। সোমবার সা’লিশ বৈঠকের মাধ্যমে কাতার প্রবাসী তার স্বামী রফিককে তালাক দিতে বা’ধ্য করা হয়।



তিনি অ’ভিযোগ করেন, তার স্বামীকে তালাক দেয়ার জন্যই শ্বশুরবাড়ির লোকজন অ’বৈধ সম্পর্কের অ’ভিযোগ এনে সা’লিশি বৈ’ঠকের আয়োজন করে। এ বিষয়ে ব্যবসায়ী রতন বলেন, বাদিয়াজান গ্রামে আমার শ্বশুরবাড়ি। সেই সুত্রেই ওই না’রীর সঙ্গে পরিচয়। তিনি আমার কাছ থেকে বাকিতে একটা থ্রি-পিস নিয়েছিলেন।



রোববার রাতে কাজ শেষে থ্রি-পিসের টাকা আনতে তার বাড়িতে যাই। এরপরই তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন ও স্থানীয়রা আমাকে আ’টকে সা’লিস বৈঠক ডাকে। এ বিষয়ে বাসাইল থা’নার ওসি হারুনুর রশীদ জানান, এ ঘ’টনায় মঙ্গলবার রতনের বাবা মোশারফ হোসেন একটি অ’ভিযোগ দা’য়ের করেছেন। এ ঘ’টনায় ত’দন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি জানান।