Breaking News

গ্যাসের হিসাব নিয়ে বিরোধে তিতাস-জিটিসিএল পেট্রোবাংলায় কমিটি গঠন

রাষ্ট্রীয় সংস্থা গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির (জিটিসিএল) বিরুদ্ধে সঠিক পরিমাণে গ্যাস সরবরাহ না করার অভিযোগ এনেছে অপর রাষ্ট্রীয় সংস্থা তিতাস গ্যাস। জিটিসিএলের সঞ্চালন ব্যবস্থার বিভিন্ন পয়েন্টে মিটার না থাকায় গ্যাস সরবরাহের অনুমাননির্ভর হিসাব দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে তিতাস।তিতাসের এ দাবি মানতে নারাজ জিটিসিএল। তারা বলছে, তিতাসকে সঠিক পরিমাণেই গ্যাস দেওয়া হচ্ছে। তারা সিস্টেমলসের নামে গ্যাস চুরির অপবাদ ঘুচাতে জিটিসিএলকে দোষারোপ করছে।তিতাস হলো গ্যাস বিতরণ কোম্পানি। ভোক্তা পর্যায়ে সরাসরি গ্যাস বিক্রি করে। তিতাস এই গ্যাস ক্রয় করে অপর রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি জিটিসিএল থেকে। জিটিসিএল হলো গ্যাস সঞ্চালন কোম্পানি। সঞ্চালন লাইন থেকে যখন তিতাসের বিতরণ লাইনে গ্যাস দেওয়া হয়, তখন মিটারে হিসাব থাকার কথা। তিতাস দাবি করছে, এই হিসাবেই গরমিল আছে।খাতসংশ্নিষ্টরা বলছেন, প্রকৃত হিসাব ছাড়া দীর্ঘদিন গ্যাস সরবরাহ করা হলো কেমন করে? দুই সংস্থারই এতে দায় রয়েছে। এর মধ্যে কোনো ঘাপলা রয়েছে কি-না খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তিতাসের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে পেট্রোবাংলা একটি কমিটি গঠন করেছে।ঢাকা, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, মুন্সীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ জেলায় গ্যাস সরবরাহ করে তিতাস। দৈনিক ২২০ কোটি ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে ১৮০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ গ্যাস পায় জিটিসিএল থেকে। বাকিটুকু গ্যাসক্ষেত্র থেকে সরাসরি সংগ্রহ করে তিতাস।

যেভাবে গ্যাস পায় তিতাস :আশুগঞ্জ-বাখরাবাদ ৩০ ইঞ্চি, বিবিয়ানা-ধনুয়া ৩৬ ইঞ্চি, রশিদপুর-আশুগঞ্জ ও বাখরাবাদ-চট্টগ্রাম ২৪ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে তিতাস ছাড়াও অন্য একাধিক বিতরণ কোম্পানিতে গ্যাস সরবরাহ করে জিটিসিএল। তবে বাখরাবাদ-সিদ্ধিরগঞ্জ ৩০ ইঞ্চি, বাখরাবাদ-ডেমরা, ধনুয়া থেকে আশুলিয়া হয়ে আমিনবাজার, আশুগঞ্জ-মনোহরদী পাইপলাইনের পুরো গ্যাস তিতাস পায়। এলেঙ্গায় রশিদপুর-আশুগঞ্জ সঞ্চালন লাইন দু’ভাগ হয়ে একটি অংশ নদীর ওপারে ও অন্য অংশ টাঙ্গাইলের দিকে গ্যাস সরবরাহ করে। সূত্র জানিয়েছে, রশিদপুর-আশুগঞ্জ পাইপলাইনের আশুগঞ্জ অংশে মিটার এবং এলেঙ্গা প্রান্তে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস (পিজিসিএল) ও সুন্দরবন গ্যাসের (এসজিডিসিএল) যৌথ মিটারিং ব্যবস্থা রয়েছে। এই দুই মিটারের রিডিং পার্থক্য থেকে তিতাসে সরবরাহ করা গ্যাসের পরিমাণ হিসাব করে জিটিসিএল। তিতাস আশুগঞ্জ ও এলেঙ্গা প্রান্তের প্রকৃত রিডিং জানতে চায়। বাখরাবাদ-সিদ্ধিরগঞ্জ পাইপলাইনের বাখরাবাদ প্রান্তের, আশুগঞ্জ-বাখরাবাদ, বাখরাবাদ-ডেমরা, বিবিয়ানা-ধনুয়া ৩৬ ইঞ্চি পাইপলাইন, বাখরাবাদ-চট্টগ্রাম ২৪ ইঞ্চি গ্যাস পাইপলাইনের তিতাস প্রান্তের সঠিক হিসাব সরবরাহ করতে জিটিসিএলের কাছে দাবি জানিয়েছে তিতাস। গত ১১ ও ২৫ এপ্রিল এ-সংক্রান্ত দুটি চিঠি জিটিসিএলকে পাঠিয়েছে তিতাস। এতে বলা হয়েছে, জিটিসিএলের গ্যাস যেসব পয়েন্ট দিয়ে তিতাসের সিস্টেমে প্রবেশ করে, সেখানকার মিটার রিডিংয়ের প্রিন্টেড কপি চায় তিতাস। যেসব পয়েন্টে মিটার নেই, থাকলেও তা কাজ করে না, সেসব পয়েন্টের সেলস মিটারভিত্তিক ডেটাও চেয়েছে তিতাস। তিতাস বলেছে, নানা ব্যবস্থা নেওয়ার পর তাদের সিস্টেমলস কমছে না। আলোচনার মাধ্যমে দেখা গেছে, যেসব পয়েন্টের মাধ্যমে তাদের সিস্টেমে গ্যাস প্রবেশ করে এসবের অনেক স্থানে মিটার নেই। ফলে তারা জিটিসিএল থেকে প্রকৃতপক্ষে কতটুকু গ্যাস পাচ্ছে তা জানতে পারছে না। এখানে ঘাপলা থাকলে সিস্টেমলস বাড়তে পারে। তাই সঠিক মিটার রিডিং জানাতে জিটিসিএলকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

তিতাসের পরিচালক (অপারেশন) কামরুজ্জামান বলেন, তিতাস কতটুকু গ্যাস পাচ্ছে তার সঠিক তথ্য নেই। এদিকে তাদের সিস্টেমলস বাড়ছে। তাই সঠিক তথ্য জানার চেষ্টা চলছে।তবে জিটিসিএলের ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা সমকালকে জানিয়েছেন, তাদের সরবরাহ পয়েন্টের বিভিন্ন স্থানেই মিটার রয়েছে। যেখানে তাদের মিটার নেই তার ডাউনস্ট্রিমে তিতাসের মিটার রয়েছে। ফলে হিসাবে পার্থক্য হওয়ার সুযোগ নেই। তারা উল্টো তিতাসকে দায়ী করে বলেন, এলএনজি আসার পর সরকার গ্যাস চুরি নিয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু তিতাসের সিস্টেমলস কমছে না বরং বাড়ছে। এই দোষ ঢাকতে জিটিসিএলের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মোস্তফা কামাল বলেন, জিটিসিএল এতদিন যেভাবে গ্যাস সরবরাহের হিসাব দিয়ে আসছে তার অনেকটাই অনুমাননির্ভর। সরকারি সম্পদের সঠিক ব্যবহারের স্বার্থেই প্রকৃত হিসাবটা জানা দরকার। জিটিসিএল গ্যাস কম দিচ্ছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সঠিক তথ্য পেলে বিষয়টি বোঝা যাবে। প্রকৃত হিসাব ছাড়া এতদিন চলল কীভাবে এমন প্রশ্নের জবাবে মোস্তফা কামাল বলেন, আগের বিষয়ে তিনি বলতে পারবেন না। তবে এখন যাতে হিসাব-নিকাশ সঠিক হয় তিনি সেই চেষ্টাই করছেন।এ বিষয়ে জিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আল মামুন বলেন, তাদের সঞ্চালন ব্যবস্থায় মিটার রয়েছে। যেখানে তাদের মিটার নেই সেখানে তিতাসের মিটার রয়েছে। হিসাব-নিকাশে কোনো সমস্যা নেই। তাই এ নিয়ে কখনও প্রশ্ন ওঠেনি। হঠাৎ করে তিতাস কর্তৃপক্ষ কেন তাদের তথ্য-উপাত্ত বিশ্বাস করছে না তা তার বোধগম্য হচ্ছে না। তিনি বলেন, জিটিসিএল পেট্রোবাংলার তত্ত্বাবধানে তিতাসের সঙ্গে এ বিষয়ে কাজ করছে। পেট্রোবাংলা একটি কমিটি করে দিয়েছে। যেখানে সব পক্ষের লোক রয়েছে। তারা প্রতি পয়েন্টে পয়েন্ট যাচ্ছেন। রিডিং নিচ্ছেন। পরবর্তীতে এসব যাচাই-বাছাই করে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

Check Also

নারীর অধিকার: নিজেকেই নিজের প্রদীপ হতে হবে

গত কয়েক দশকের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়গুলোর অন্যতম হলো নারীর অধিকার। কিন্তু এই অধিকারের সংজ্ঞা বা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *