কোনো বীমা কোম্পানি এজেন্টকে ১৫ শতাংশের বেশি কমিশন দিলে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। জরিমানা করা ছাড়াও প্রয়োজনে লাইসেন্স স্থগিত বা বাতিলের মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নেবে। এক্ষেত্রে বীমা কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) পূর্ণ সমর্থন থাকবে। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন সতর্কবার্তা দিয়েছে বিআইএ।সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য দেন বিআইএ সভাপতি শেখ কবির হোসেন। উপস্থিত ছিলেন ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান, এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান আফতাবুল ইসলাম, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু, রূপালী ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান এম. জি. কুদ্দুছ, অগ্রণী ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান কাজী সাখাওয়াত হোসেন লিন্টু, বিআইএর নির্বাহী কমিটির সদস্য নাসির উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।কিছু নন-লাইফ বীমা কোম্পানি এজেন্টদের বেশি কমিশন দেওয়ায় বাকিরা বড় চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে উল্লেখ করে শেখ কবির বলেন, এটাই এ মুহূর্তে বীমা খাতের সবচেয়ে সমস্যা। অতিরিক্ত কমিশন দেওয়ার ফলে কোম্পানিগুলোর কাছে বীমা দাবি পূরণ করার মতো অর্থ থাকে না, যা বীমাশিল্পের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে, আস্থা হারাচ্ছেন গ্রাহকরা। যেকোনো মূল্যে এ সংকট মোকাবেলা করা হবে। তিনি বলেন, কমিশনের বিষয়ে আইডিআরএ নতুন করে সার্কুলার করেছে। এরপর এক বৈঠকে সব বীমা কোম্পানির চেয়ারম্যানরা সম্মত হয়েছেন। এজেন্টদের ১৫ শতাংশের বেশি কমিশন দেওয়া হবে না। এর ব্যত্যয় যিনি করবেন, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সার্বিক বীমা খাত বিষয়ে তিনি বলেন, দেশের বীমা সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। এখানে বীমার সংস্কৃতিই তৈরি হয়নি। সরকারি বা বেসরকারি কোনো পর্যায়ে স্থাপনাসহ মূল্যবান সম্পদের বীমা করা হয় না। দেশে এখন অনেক ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি হচ্ছে, যেগুলোর বীমা নেই। কখনও দুর্ঘটনায় ভবন ধসে গেলে ফ্ল্যাট মালিকরা কিছুই পাবেন না। নতুন ভবন করার ক্ষেত্রে বীমা বাধ্যতামূলক করা গেলে ভবনগুলো তৈরিতে বিল্ডিং কোড মেনে ভবন তৈরি হতো। তাতে দুর্ঘটনাও কমত। একইভাবে যানবাহন দুর্ঘটনায় কেউ কোনো ক্ষতিপূরণ পায় না উল্লেখ করে শেখ কবির বলেন, এর বড় কারণ ‘থার্ড পার্টি ইন্স্যুরেন্স’ নামে একটি বীমা পলিসি। আসলে এটা কোনো বীমাই নয়। যারা এ পলিসি নিচ্ছেন, তারা খরচ বাঁচাতে গিয়ে বা শুধু আইনকে অনুসরণ করতে গিয়ে এ বীমা করছেন। এ বীমার জন্য কেউ কোনো ক্ষতিপূরণ পান না। বাইরের দেশে এমন বীমা কল্পনাই করা যায় না।
বিআইএ সভাপতি বলেন, বীমাশিল্পকে এগিয়ে নিতে হলে বীমা সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে। সর্বক্ষেত্রে বীমাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে। বৃহৎ প্রকল্পের অর্থায়নে বীমা খাত থেকে অর্থায়ন নিতে পারে সরকার। এমন অর্থায়নে সক্ষমতা দেশের বীমা খাতের রয়েছে। সরকার চাইলে পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্পে অর্থায়ন করতে পারি।তিনি বলেন, আশার কথা, বর্তমান সরকার অর্থনৈতিক উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে বীমার গুরুত্ব বুঝতে পেরেছে। আগে জাতীয় বাজেটে বীমা খাত গুরুত্বই পেত না। এখন গুরুত্ব পাচ্ছে। এবারের বাজেটে প্রবাসীদের জন্য বাধ্যতামূলক বীমার প্রচলন করার কথা বলা হয়েছে। কৃষি খাতে ‘শস্যবীমা’ প্রকল্পের কথাও এসেছে। এগুলো ইতিবাচক। বিআইএ চায়, পর্যায়ক্রমে সর্বক্ষেত্রে বীমা বাধ্যতামূলক করা হোক।