কোরবানি হাটে আসছে ডোনাল্ড ট্রাম্প। থাকছে মাফিয়া ডন আর টাইগারও। ভড়কে যাবেন না। ক্রেতা আকর্ষণে এমন সব নামেই হাটে আসছে কোরবানির পশুগুলো। ১৫ থকে ২৫ লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এসব আকর্ষণীয় গরু। তবে শুধু আকর্ষণ আর বাহারি রঙ-চং দেখেই নয়, গরুর সুস্থতা নিশ্চিত করেই কেনার পরামর্শ পশু বিশেষজ্ঞদের।



ডোনাল্ড ট্রাম্প নাম, চাহনি আর গায়ের রঙের কারণেই নাকি রাখা হয়েছে এমন নাম। কোরবানির হাটের জন্য প্রস্তুত করা ১২শ’ কেজির এই গরুটির দাম হাঁকা হচ্ছে ১৪ লাখ। পাবনা থেকে রাজধানী বসিলা হাটে এসেছে টাইগার। এক নজর দেখতে তাই বৃষ্টি উপেক্ষা করেই ভিড় করছেন উৎসুক জনতা। সেলফি তুলতে ভোলেননি অনেকে।



২৫ লাখ টাকা দাম হাঁকানো টাইগারটি বড় করেতে সময় লেগেছে পাঁচ বছর। তবে আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় হতাশ গরুর কর্তা। হেলে দুলে নিজের ভঙ্গিতে হাঁটাচলা পছন্দ ডনের। কোরবানির হাটে খুব শিগগিরই দেখা মিলবে তার। তার দেখাশোনায় কোনো কমতি রাখছেন না পরিচর্যাকারীরা।



কৃষি গবেষক নজরুল ইসলাম বলেন, গরু কেনার আগে প্রথমে দেখতে হবে গরু দেশি কিনা। দ্বিতীয়ত দেখতে হবে তার অঙ্গ-পতঙ্গ ঠিক আছে কিনা। সরকারি তথ্য মতে, এ বছর কোরবানির চাহিদা আছে প্রায় ১ কোটি গরুর। দেশে গরু মজুত আছে ১ কোটি ১৫ লাখ।



৫০ মণ ‘ভাগ্যরাজ’র দাম ২২ লাখ



৫০ মণ ওজনের গরু। নাম তার ভাগ্যরাজ। মালিক মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার খান্নু মিয়া। কোরবানির হাটে বিক্রির আগে পরম যত্নে খাওয়ানো হচ্ছে চিড়া, আপেল,মাল্টাসহ বিভিন্ন খাবার। তার নিরাপত্তায় নজরদারি বাড়িয়েছে পুলিশ। আর জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সব সময় পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করছে খামারিকে। স্বল্প একটা পরিসরে ছোট একটি ঘর। তার পাশেই গোয়াল ঘর। এখানেই থাকে ভাগ্যরাজ। ১০ মাস আগে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকায় ষাঁড়টি কেনেন খান্নু মিয়া। তার প্রত্যাশা ২০ থেকে ২২ লাখ টাকা দাম পাবেন। তাই ভোরে জেগে ওঠার পর থেকেই খান্নু মিয়া, তার স্ত্রী পরিষ্কার বেগম ও মেয়ে ইতি ভাগ্যরাজকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন সারাদিনের জন্য।



সকাল থেকেই পশুটির খাবারের উপকরণ তৈরি করা,গোছল করানো, খাওয়ানোসহ সবই চলে দিনভর ধাপে ধাপে। কয়েকদিন পরই ভাগ্যরাজকে তোলা হবে কোরবানির হাটে, তাই যত্নের কমতি নেই। ব্যস্ততা বেড়েছে কয়েকগুণ। চিড়া ,কলা, আপেল, মাল্টা, বেলের সরবত, ইসুবগুলের ভূষিসহ বিভিন্ন উপকরণ তৈরির পর ভাগ্যরাজকে সকালে প্রথমে গোসল করানোর পর খড় খাওয়ানো হয় । এরপরই ফল দেয়া হয় ভাগ্যরাজকে। নান্নু মিয়ার স্ত্রী পরিষ্কার বেগম বলেন, আমি আশা করছি যাতে এটা বিক্রি করে উপযুক্ত টাকা পাই।



নান্নু মিয়াসহ স্থানীয়রা বলছেন, ভাগ্যরাজই এবার দেশের সবচে বড় কোরবানির পশু। হলেস্টাইন ফ্রিজিয়ান জাতের ভাগ্যরাজ নামের এই গরুটিকে কোন হরমোন ছাড়াই দেশীয় পদ্ধতিতে মোটাতাজার পাশাপাশি ও বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলে দাবি জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের। মানিকগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুল রাজ্জাক বলেন, এই গরুতে কোনো রকম স্টেরয়েড কিংবা হরমোন ব্যবহার করা হয়নি। আমরা তাকে স্বাভাবিক খাবার খাওয়াতে বলেছি।



এদিকে ওজনে সবচে বেশি হওয়ায় কোরবানির জন্য পালন করা ভাগ্যরাজকে নজরদারিতে রেখেছে সাটুরিয়া পুলিশ প্রশাসন। মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মতিয়ার রহমান মিঞা বলেন, আমরা নিরাপত্তার সার্বিক ব্যবস্থা করেছি। কোনো ধরনের সমস্যা নেই। নান্নু মিয়া গত কোরবানির ঈদে রাজাবাবু নামের হলেস্টাইন ফ্রিজিয়ান জাতের ২ হাজার ২০১ কেজি ওজনের গরু সুনামগঞ্জের এক ব্যবসায়ীর কাছে সাড়ে ১৮লাখ টাকা বিক্রয় করে সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। এবার ২ ভাগ্যরাজের ওজন ২ হাজার কেজি।