Breaking News

রাশিয়ায় পারমানবিক গবেষণার সুযোগ পেয়েছিলেন বুয়েটের আবরার

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবরার ফাহাদ রাশিয়ায় পারমানবিক গবেষণার সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে তিনি সেখানে যাননি। মায়ের আপত্তির কারণে দেশ ছেড়ে যাননি আবরার। এমন তথ্যই জানিয়েছেন আবরারের মা। তিনি বলেন আমার ছেলে মেডিকেল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছিল। তবে তার স্বপ্ন ছিল বুয়েটে পড়াশোনা করার তাই সে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। রাশিয়া গিয়ে পারমানবিক নিয়ে গবেষণার সুযোগও পেয়েছিলেন আবরার। কিন্তু তিনি আপত্তি তুলেন। কারণ তার ধারণা ছিল যারা পারমানবিক নিয়ে কাজ করে তাদের ক্যান্সার হয়। তাই তার অনুমতি না পেয়ে বুয়েটে ভর্তি হয়েছিলেন আবরার। গ্রামের বাড়িতে শোকার্ত মা রোকেয়া খাতুন আহাজারি করে সাংবাদিকদের এসব তথ্য দেন।

আবরারের মা বলেন, ছেলেটা ঢাকা মেডিকেল, ঢাবি আর বুয়েটে চান্স পেয়েছিল। সব বিসর্জন দিয়ে ভর্তি হয় বুয়েটে ইঞ্জিনিয়ার হবে বলে। আজ ছেলেটা লাশ হয়েছে। তাকে মেডিকেলে পড়তে বলেছিলাম, সে পড়ে নাই; যেতে হয়েছে মেডিকেলের মর্গে।

জানা গেছে, নিহত আবরার ফাহাদ কুষ্টিয়া-৩ সদর আসনের সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফের বাড়ির পেছনের বাসিন্দা অবসর প্রাপ্ত ব্র্যাক কর্মী বরকত উল্লাহ-রোকেয়া দম্পতির বড় ছেলে। গ্রামের বাড়ি কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের রায়ডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা।

পারিবারিক সূত্র জানায়, বরকত উল্লাহর ছেলে বড় ছেলে আবরার ফাহাদ ২০১৫ সালে কুষ্টিয়া জেলা স্কুল বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। পরে এইচ এসসি বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন ঢাকা নটরডেম কলেজে। সেখান থেকে ২০১৭ সালে এইচ এসসি পরীক্ষাতেও গোল্ডেন এ প্লাসসহ উত্তীর্ণ হন। পরে বুয়েটের ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিকস বিভাগে ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন। ফাহাদ সেখানে শেরে বাংলা হলের ১০১১ নং কক্ষের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। ফেইসবুকে ভারতের সঙ্গে পানি গ্যাস ও বন্দর চুক্তি নিয়ে স্ট্যাটাস দেয়ায় তাকে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এঘটনায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের ১৩জনকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।

মাথা ঠিক ছিল না টানা এক ঘণ্টা পিটিয়েছি, এখনও অনুতপ্ত নয় অনিক

বুয়েট ছাত্র আবরার হ’ত্যা মা’মলায় আ’দালতে জবানব’ন্দি ও পু’লিশের জিজ্ঞাসাবাদে অনিক সরকার বলেন, ‘ওকে আগে থেকেই শিবির বলে সন্দেহ করা হতো। যখন ওর কক্ষ থেকে ধরে আনা হয় তখন সে আবোল-তাবোল কথা বলছিল। ওর মোবাইলে ইস’লামী গান ও গজল পাওয়া যায়। যখন ও শিবিরে জ’ড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে এলোমেলো কথা বলছিল, তখন মাথা ঠিক রাখতে পারিনি। স্টাম্প দিয়ে বেধড়ক মা’রধর শুরু করি। দুই দফায় মে’রেছি। একবার টানা এক ঘণ্টা পি’টিয়েছি।’ তবে এখনও এ ঘটনায় অনুতপ্ত নয় অনিক।

গতকাল ১২ অক্টোবর শনিবার মহানগর হাকিম আতিকুল ইস’লাম তার খাস কাম’রায় আ’সামির জবানব’ন্দি নেন। অনিক বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণাবি’ষয়ক সম্পাদক। আবরার হ’ত্যার পর তাকে ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র সে। জবানব’ন্দি নেওয়ার পর অনিককে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

এ ব্যাপারে সূত্র জানায়, আবরারের ওপর যারা সরাসরি হা’মলায় অংশ নেয় তার মধ্যে অনিক ছিল সবচেয়ে পাষণ্ড। ত’দন্তে উঠে আসে, হা’মলার সময় সে ম’দ্যপও ছিল। আবরারকে মা’রধরের সময় অশ্নীল ভাষায় তাকে গালমন্দও করে সে।

এ নিয়ে আবরার হ’ত্যা মা’মলায় মোট তিনজন ১৬৪ ধারায় জবানব’ন্দি দিল। এর আগে গত শুক্রবার জবানব’ন্দি দিয়েছে মেফতাহুল ইস’লাম জিয়ন। সে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের বহিস্কৃত ক্রীড়া সম্পাদক। এছাড়া গত বৃহস্পতিবার জবানব’ন্দি দিয়েছে আরেক আ’সামি ইফতি মোশাররফ সকাল।

এদিকে আবরার হ’ত্যা মা’মলার ত’দন্ত কর্মক’র্তা গোয়েন্দা পু’লিশের (ডিবি) পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান ১৬৪ ধারায় অনিকের স্বীকারোক্তিমূলক জবানব’ন্দি গ্রহণের আবেদন করেন। ত’দন্তকারী কর্মক’র্তা আবেদনে উল্লেখ করেন, মা’মলার আ’সামি সকাল ও জিয়ন স্বীকারোক্তিমূলক জবানব’ন্দিতে অনিক সরকারের নাম প্রকাশ করে। রি’মান্ডে অনিক স্বীকার করে যে, সে ঘটনার সময় দুই দফায় স্টাম্প দিয়ে আবরারের শরীরের বিভিন্ন স্থানে শতাধিক আ’ঘাত করে।

আবরার হ’ত্যার এজাহারভুক্ত আ’সামি মোয়াজ আবু হুরাইরাকে গতকাল গ্রে’ফতার করেছে ঢাকা মহানগর ডিবি। এ নিয়ে এ ঘটনায় ১৯ জনকে গ্রে’ফতার করা হলো। এর মধ্যে ১৫ জন এজাহারভুক্ত আ’সামি।

এদিকে দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, আবরার হ’ত্যায় গ্রে’ফতার অধিকাংশ আ’সামি জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাদের ঘৃণ্য অ’প’রাধের জন্য অনুতপ্ত হলেও অনিক ব্যতিক্রম। সে তার ‘ভুল’ শোধ’রানোর জন্য একবারের জন্য সুযোগ চেয়েছে। তবে আবরারের ওপর নি’র্যাতনের ভয়ঙ্কর বর্ণনা তার মুখ থেকে উঠে এসেছে। অনিক জানায়, আবরার অচেতন হওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে বেদম মা’রধর করা হয়। একাধিকবার বমিও করেছিল সে। অনিক ছাড়াও আবরারের ওপর হা’মলায় মেহেদী হাসান রবিন, ইফতি মোশাররফ সকাল, মুজাহিদুর রহমানসহ অন্তত পাঁচজন জ’ড়িত ছিল।

মুজাহিদ, সকাল ও রবিনও আবরারকে দফায় দফায় মে’রেছে। মা’রধরের এক পর্যায়ে অনিক ফোন করে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাসেল ও মুন্নাকে। অনিক তাদের জানায়, ‘আবরারের শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। কোনো নড়াচড়া করছে না।’ তখন রাসেল ও মুন্না অনিককে বলে, ‘ও ঢং ধরেছে।’

আবরারকে তার রুম থেকে ধরে আনার পর শিবির স’ম্পর্কে তথ্য জানতে স্টাম্প দিয়ে মা’রধর শুরু করে সকাল। এ সময় একটি স্টাম্প ভেঙে যায়। পরে আরেকটি স্টাম্প দিয়ে অনিক আবরারের হাঁটু, পা, পায়ের তালু ও বাহুতে মা’রতে থাকে। এক দফা মা’রধরের পর অনিক ২০১১ নম্বর রুম থেকে চলে যায়। তখন আবরারকে স্কিপিং রোপ দিয়ে মা’রধর করে মুজাহিদুল ইস’লাম। রাত ১১টার দিকে আবার অনিক ২০১১ নম্বর কক্ষে আসে। তখন এলোপাতাড়ি আবরারকে পে’টাতে থাকে অনিক।

এসময় তাকে দেড় শতাধিক বার মা’রে সে। অনিকের মা’রধর দেখে সেখানে উপস্থিত অন্যরা আঁতকে ওঠে। ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত নি’র্যাতন চালিয়ে অনিক আবার কক্ষ ত্যাগ করে। নি’র্যাতনের শিকার আবরার এরই মধ্যে একাধিকবার বমি করেন। নিস্তেজ হয়ে ফ্লোরে পড়ে যান। তার এ অবস্থা দেখে হা’মলাকারীদের কেউ কেউ ভয় পেয়ে যান। তারা ফোনে আবরারের শারীরিক অবস্থা অনিককে জানায়। এরপর আবরারকে নেওয়া হয় ২০০৫ নম্বর কক্ষে।

এরই মধ্যে অনিক হা’মলাকারীদের জানায়, যেন আবরারের হাত-পায়ে মলম লাগিয়ে দেওয়া হয়। তাকে গোসল করানোর কথাও বলে অনিক। কিছুক্ষণ পর মেহেদী ও অনিক ২০০৫ নম্বর কক্ষে যায়। তারা আবরারকে দেখে বলেন, ‘ও ঢং ধরেছে। ওর কিছু হয়নি। ও ঠিক আছে।’

আবরার হ’ত্যা মা’মলায় আরেক আ’সামি মাজেদুর রহমান নওরোজকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রি’মান্ডে নিয়েছে পু’লিশ। আবরার হ’ত্যাকাে র পর আ’সামির তালিকায় থাকা মাজেদুল ইস’লামকে শুক্রবার সিলেট থেকে গ্রে’ফতার করা হয়। শনিবার আ’দালতে হাজির করা হলে সে জানায়, তার নামটি ভুল বলেছে পু’লিশ। সে বলে, ‘আমা’র নাম মাজেদুর রহমান নওরোজ। পু’লিশ ভুল করে মাজেদুল ইস’লাম লিখেছে।’ আবরারের বাবা ১৯ জনকে আ’সামি করে চকবাজার থানায় যে মা’মলা’টি করেন, সেখানে আ’সামির তালিকায় ৮ নম্বরে তার নাম রয়েছে।

আ’দালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে মাজেদুল বলেছে, ‘সিসি ক্যামেরার ফুটেজে আমাকে দেখা গেছে কি-না, জানি না। আ’হত অবস্থায় আবরারকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার দলে আমিও ছিলাম।’ ওই সময় বুয়েট ছাত্রলীগের আইনবি’ষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহা হলে ছিল না বলে দাবি করে মাজেদুলের।

Check Also

এই ছোট্ট মেয়ে পেলেন বিশ্বের সেরা সুন্দরী শিশুর শিরোপা, রইল তার আসল পরিচয়

নীল চোখের ছোট্ট পরী সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। জন্মানোর পর থেকেই তার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *